Emir Temur lang

মহান আমির তিমুর লং   



তিমুর লং সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমেই জানতে হবে তার মহান বিজতা হওয়ার পূ্র্বের পরিচয়। সিরাজ উদ্দীন তিমুর ১৩৩৬ সালের ৯ এপ্রিল, বর্তমান উজবেকিস্তানের সবুজ শহরের( Shahr- i- Sabz) বারলাস গোত্রে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা আামির তারগাই ছিলেন বারলাস গোত্রের প্রধান বা গোত্রপতি। বাল্যকালেই তার মা মারা যান। তার বাবা একজন আমির বা নেতা হলেও সুফি ভাবধারায় প্রভাবিত হয়ে প্রায়ই সুফিদের সাথে সময় কাটাতেন। মাঝে মাঝে তিনি গোত্র ত্যাগ করে সুফি দরবেশদের সান্নিধ্য লাভের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করতে চলে যেতেন। ফলে মায়ের পাশাপাশি বাবার সান্নিধ্যও খুব একটা পাননি তিমুর। ছোটবেলায় গোত্রের এবং তার পূর্ব পুরুষদের বীরত্বগাথা গল্প শুনেই দিন সময় কাটাতেন তিমুর। ফলে খুব সাদাসিধে ভাবেই শৈশব কেটেছে তিমুরের। কেউ কি অনুমান করতে পেরেছিল যে এমন  সাদাসিধে, নম্র ও বেজায় ভদ্র ছেলেটি একসময় পুরো মধ্য এশিয়াসহ অর্ধ্ পৃথিবীর একচ্ছত্র আধিপতি ও শাসক হবেন, হয়তো কেউনা।


জীবনের একাকিত্ব কাটাতে মাভরান্নাহার আর সবুজ শহরের অধিপতি কাযানের বাহিনীতে যোগদেন। কাযান ছিলেন মুলত মোঙ্গল খানদের অধীনে একজন উচ্চ পদস্থ রাজকর্মচারী। কাযান ধীরে ধীরে এতটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল যে চেঙ্গিস খানের পুত্র চাগাতাই খানের উত্তরসূরিরা তার পুতুলে পরিণত হয়েছিল। একজন গোত্রপতির সন্তান হওয়ায় কাযান ও তার সৈন্যরা তিমুরকে অনেক সমীহা ও সম্মান করতেন। কাযানের বাহিনীতে  তিমুর নিজের যোগ্যতা প্রমান করে কয়েক হাজার তাতার সৈন্যের কমান্ডার নিযুক্ত হন। কাযানকে নানা প্রতিকূল সময়ে তীক্ষ্ণ ও সুচিন্তিত পরামর্শ দিতেন তিমুর। ফলে তিমুর কাযানের একজন সাহসি সৈনিক থেকে বিশ্বস্ত ও প্রীয় পরামর্শক হয়ে যান। কাযান তিমুরের জ্ঞান, সাহসিকতা ও বিশ্বস্ত মুগ্ধ হয়ে তার নাতনি আলজাই আগাকে তিমুরের কাছে  বিয়ে দেন।


একদিন কাযান তার সবচেয়ে শখের কাজ শিকারে গিয়েছিলেন, সেসময় তার প্রতি অসন্তোষ্ট ও শত্রু মনোভাব পোষণকারি দুজন গোত্রপতি তাকে হত্যা করে। তীরের আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়। সেসময় তিমুর তার পাশে ছিলেন না। খবর পাওয়ার সাথে সথেই তিমুর সেখানে উপস্থত হয়ে কাযানের লাশ মাভরান্নাহারে নিয়ে আসেন এবং সমাধীস্থ করেন। তিমুর হত্যাকারিদের শাস্তি দিতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন তাই তিনি হত্যাকারিদের খুজতে যাওয়া বাহিনীর সাথে যোগদেন এবং দুজন হত্যাকারিকেই তলোয়ারের এক আঘাতেই হত্যা করা হয়। তিমুর সবুজ শহরে ফিরে আসলেন।


কাযানের মৃত্যুর কিছুদিন যেতে না যেতেই তার উত্তরসুরী নির্বাচন নিয়ে বিবাদ শুরু হয়ে যায়। কাযানের ছেলে বাবার সিংহাসনের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পরাস্থ হন আর পালিয়ে যান। তিনি যেন পালিয়ে বাচাকেই বেশি সম্মানের মনে করে ছিলেন। কাযানে বাকি আমিররাও রাজ্যে বিশ্রীঙ্খলা তৈরী করছিল ক্ষমতার জন্য। প্রত্যেক আমির ভিন্ন ভিন্ন দূর্গে অবস্থান নিল। এসময় তিমুরের চাচা হাজি বারলাস আর জালাইর গোত্রের প্রধান বাইজীদ জালাইর এসে নিজেদেরকে সমরখন্দের শাসক দাবি করলেন। বারলাসের বেশিরভাগ মানুষ তিমুরকে ত্যাগ করে হাজির সাথে সমরখন্দে চলে যায়। তিমুর কয়েকশো সৈন্য নিয়ে সবুজ শহরে একা থেকে যান।


ততক্ষণে চেঙ্গিস খানের প্রপৌত্র তুঘলক খান বিশাল সৈন্য বাহিনী নিয়ে দৃশ্যপটে অবতীর্ণ হন। খানের আগমনে কাযানের সভাসদরা নিজেদের গুটিয়ে নিলেন। শুধুমাত্র বাইজীদ জালাইর ছাড়া। তার শহর ছিল খোজেন্দ যা খানের সম্রাজ্যের প্রবেশদ্বার। বাইজীদ দ্রুত শহরে ফিরে গিয়ে খানের কাছে উপহার পাঠিয়ে খানের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে। এমন সময় তিমুরের পিতা মারা যায় আর গোয়ার ও একগুয়ে হাজি বারলাস নিজেকে বারলাস আর সবুজ শহরের অবিতর্কিত নেতা হিসেবে ঘোষণা দেয়। নেতা হয়ে খানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ইচ্ছা পরিবর্তন করে হেরাত চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তিমুরকেও তার সাথে যোগ দেয়ার প্রস্তাব দেওয়া হলো। কিন্তু তিমুর উত্তরে তার চাচাকে বললেন সবুজ শহরকে নেতৃত্বহীন রেখে তিনি যাবেন না। তারপর তিমুর খানের রাজ সভায় যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। সবুজ শহরে তখন খানের আক্রমনের ভয় আর অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। সৈন্যরা তাদের স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে পালাচ্ছে। তিমুর সমরখন্দে খানের তবুতে পৌছালেন। রাজসভায় তিনি খানের সামনে তার সাথে নিয়ে যাওয়া উপহার রাখলেন। তিমুর তার সকল সম্পদ খানকে উপহার হিসেবে দিলেন। কয়েকদিন পর খানের কয়েকজন সভাসদ একজোট হয়ে সম্রাজ্যের অন্য আরেক সীমান্তে বিদ্রোহ করে। খান সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না কি করবেন। তিমির তার পাশেই ছিল। তিমিরকে বুদ্ধিমান ও জ্ঞানি মনে হওয়ায় খান তার কাছে পরামর্শ চাইলেন। তিমুর তাকে দেশে ফিরে গিয়ে বিদ্রোহ দমনের পরামর্শ দেন। খান পরামর্শ মতো নিজ দেশে ফিরে গেলেন। যওয়ার আগে তিমুরকে মিংবাসি ( ১০০০০ সৈন্যের কর্তৃত্ব) নিয়োগ দিয়ে যান। খান চলে গেলে বাইজীদ আর হাজি বারলাস আবার জোট বাধে। তারা তিমুরকে হাত্যা করার সিদ্ধান্ত নিল। ফলে তারা তিমুরকে তাদের তাবুতে ভোজের দাওয়াত দেন। তিমুরও দাওয়াত গ্রহণ করলেন। হাজি ও বাইজীদের ইচ্ছা ছিল খাবারে বিষ প্রয়োগ করে যুবক যোদ্ধা তিমুরকে হত্যা করা। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পেরে তিমুর তাদের তাবু থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। বাইজীদ জালাইর এই ঘটনার জন্য তিমুরের কাছে ক্ষমা চান। কিন্তু হাজি বারলাস ক্ষমা না চেয়ে সবুজ শহরে যুদ্ধের জন্য অবস্থান নিলেন। তিমুরও ছেড়ে দেয়ার খেয়ালে ছিল না। যখন তার অধীনে আছে ১০০০০ মোঙ্গল সেনা। চাচা ও ভাতিজা মুখোমুখি হলেন। দুই পক্ষের মদ্ধে মৃদু যুদ্ধ হলো। কিন্তু হঠাৎই হাজি যুদ্ধ বন্ধ করে দক্ষিণ দিকে পলিয়ে যান। কিন্তু তিমুরের সৈন্যরাও তিমুরকে ত্যাগ করে হাজির দলে যোগদেয়। কী কারণে তিমুরের সৈন্যরা পক্ষ ত্যাগ করেছিল তা এখনো অস্পষ্ট। তখন তিমুর সৈন্যের জন্য আলজাই আগার ভাই আমির হুসাইনের সাথে জোট বাধেন। আমির হুসাইন তখন আফগানদেট নিয়ে সবুজ শহরের দিকে আসছিলেন। 


এমন সংকটময় সময় মোঙ্গল খান বিদ্রোহ দমন করে সমরখন্দে ফিরে আসেন। এবার তিনি অনেক শক্তিশালী। তার সেনাবাহীনিও আগের থেকে অনেক বেশি বিশাল আর সুদক্ষ। খান এসেই বাইজীদ জালাইরকে কৃতকর্মের জন্য গর্দান নিলেন। হাজি ও পালাল কিন্তু পথে চোরের দলের কাছে খুন হন। তার সেন্যরা খানের আগমনে তাকে ছেড়ে খানে বাহিনির সাথে যোগ দেয়। খান এই বিজয়ে অনেক খুশি হলেন। তিনি তার পুত্র ইলিয়াসকে এই নতুন প্রদেশের শাসক বানিয়ে দিলেন আর সেনাপতি বিকিযুককে রেখে গেলেন যেন সবাই তার ছেলেকে মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে।


তিমুরকে ইলিয়াস ও বিকিযকের অধীনে রাখা হয়। তিমুর শুরুতে এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে চাননি। কিন্তু ভবিষ্যত চিন্তা করে তিমুর এ সিদ্ধান্ত মেনে নেন। মনে ক্ষোভ রেখেই তিনি সবুজ শহরকে সুন্দরকরে সাজালেন। কিন্তু বিকিযুক সমরখন্দ থেকে এসে এসব কিছু ধ্বংস করতে লাগল। তিমুরের শহরের ইমামদের  লাঞ্ছিত করে এবং সমরখন্দের নারীদের দাসী বানিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। ব্যাথিত মনে তিমুর খানকে তার ছেলে ইলিয়াস ও সেনাপতি বিকিযুকের অপকর্মের কথা জানালেন কিন্ত কোন উপকার পেলেন না। তাই তিমুর নিজেই তার সৈন্যদের একত্রিত হতে বলেন। তিমুর নিজেই কয়েকজন বন্দিকে উদ্ধার করলেন। খানের কাছে খবর গেল তিমুর বিদ্রোহ করেছে। খান তিমুরের গর্দান নেয়ার আদেশ দিলেন। তিমুর মরুভূমিতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলেন। মরুময় জীবনে তার সঙ্গী ছিলেম প্রীয়তমা স্ত্রী আলজাই আগা আর ছিলেন আমির হুসাইন ও তার কিছু সৈন্য। মরুভূমিতে প্রায় তিন মাস সময় কাটান তিমুর ও তার পরিবার।


তিমুরের মরুভূমির দিকে পলায়নের কয়েক মাস পর সমরখন্দ, সবুজ শহর ও অন্যান্য বড় শহরগুলোর পরিস্থিতি ঠান্ডা হয়ে যায়। ফলে মোঙ্গল খানজাদা ইলিয়াস একটু স্বস্তি বোধ করলেন। তিমুর এমন পরিস্থিতির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। পরিস্থিতি ঠান্ডা হতেই তিনি আলজাই আগাকে সমরখন্দের পার্শ্ববর্তী ছোট্ট একটি গ্রামে গোপনে লুকিয়ে রেখে ছদ্মবেশে সমরখন্দ শহরে প্রবেশ করেন। মোঙ্গল বিচক্ষণ প্রহরীদের চোখে ধুলো দিয়ে তিমুর প্রায় ৪৮ দিন সমরখন্দ শহরে অবস্থান করেন। রাতের বেলায় তিনি শহরের সরাইখনাগুলোতে গিয়ে শহরের বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন, বন্ধুদের সাথে দেখা করতেন। তিমুরের উদ্দেশ্য ছিলো শহরে আচমকা এাকটি বিদ্রোহ করা যা এই মুহূর্তে কেউ আশা করছে না। কিন্তু তিমুরের এই পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে গেলো আর তিমুর দ্বিতীয়বারের মতো মরুভূমির বাসিন্দা হলেন। তবে এবার তিমুর একা যাননি, সঙ্গে নিয়ে গিয়েছেন সেনাপতি বিহীন কয়েকশ সৈন্য। এরা ছিলো দুর্দান্ত যোদ্ধা, শত্রুর আক্রমণে বাধা হয়ে দাড়াতে এরা খুব পারদর্শী। 


অন্যদিকে প্রয়াত রাজশক্তির স্রষ্টার দরবারের কিছু পলাতক আমীর তিমুরের খোঁজ পেয়ে তিমুরের কাছে চলে গেল। তিমুর তাদের দেখে খুশি হলেন আর ভোজ আর পান সভার আয়োজন করেন। পান পাত্রে ঠোট লাগাতে লাগাতে কয়েকজন আমীর তিমুরকে বললেন যে " আল্লাহর পৃথিবী যখন এত বড়, তাহলে এই দেয়াল ঘেরা জায়গায় কেন আছ?"

তিমির চিৎকার করে বলে ওঠলেন "আপনারা কি করে যেতে চান? আপনারা কি কাক যে জাটদের আবর্জনার ওপর বেচে থাকতে চান, নাকি ঈগলের মতো নিজের শিকার ছিনিয়ে নিতে চান?" তখন উত্তরে আমীররা বলল আমরা কাক না। এভাবেই পানসভা শেষ হয়। তিমুর সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে দক্ষিণে আফগানিস্তানের পাহাড়ি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে  কবুলের দিকে রওয়ানা হলেন আমীর হোসাইনের সাথে দেখা করতে। প্রায় ১২শ মাইল রাস্তা পাড়ি দিয়ে কাবুলে পোছলেন। কবুলের একটি পাহাড়ের উপত্যকায় আমীর হুসাইনের সাথে তিমুরের দেখা হয়। তিমুর ও তার সঙ্গিরা বিশ্রাম নিলেন। কয়েকদিন পর পার্শ্ববর্তী পাহাড়ি অঞ্চল সিজিস্তানের(বর্তমান সিস্তান,ইরান) শাসক তিমুর ও আমীর হুসাইনের কাছে দূত মরেফত উপঢৌকন পাঠালেন। রাষ্ট্রদূতের কাছ থেকে এই আর্থিক উপহার পেয়ে তিমুর ও হুসেইন দুজনই মনে একটু সাহস পেলেন কারণ তিমুর ও হুসাইন দুজনই দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় আর্থিক সমস্যার মধ্যে ছিলেন। সিজিস্তানের শাসকের একজন সেনা কর্মকর্তা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। সিজিস্তানের শাসকের পক্ষে এ বিদ্রোহ দমন করা সম্ভব ছিল না, তাই তিনি তিমুর ও হুসাইনকে তার সাথে যোগ দিতে বলেন। তিমুর ও হুসাইনের যৌথ শক্তি এ প্রস্তাবটি মেনে নিলেন। সিজিস্তানের শাসক চুক্তি অনুযায়ী হুসাইনকে দক্ষিণের প্রদেশের শাসক নিয়োগ করবেন। তিমুর তেমন কিছুই চাইলেন না। শাসকের সাথে তারা যুদ্ধে অংশ নিল এবং বিদ্রোহীদের কাছ থেকে প্রায় সবগুলো দূর্গ দখল করে নিলেন। বিদ্রোহীরা শাসকের কাছে আত্মসমর্পণ করে কিন্তু তারা শাসকের মনে তিমুরের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি করে দেয়। শাসক আচমকা তিমুরের উপর আক্রমণ করে বসে। তিমুরও পাল্টা আক্রমণ করে এবং সিজিয়দের পিছু হটতে বাধ্য করেন। কিন্তু তিমুর গুরুতর আহত আহত হন। তার পায়ে এবং বাহুতে দুটি তীরের আঘাত লাগে। আমীর হুসাইন তখন যুদ্ধ ময়দানের অন্য প্রান্তে যুদ্ধ করছিলেন। তিমুরকে রক্ষা করার জন্য তিমুরের বাহিনীর সাথে যোগদিলেন। যুদ্ধে সিজিয়রা পরাজিত হল। যৌথ শক্তির এই বিজয়ের ফলে প্রচুর অর্থ সম্পদের মালিক হয়ে যায় সাথে অনেক বন্দি সৈন্যকে তাদের অনুসারী হিসেবে পান। বেশিরভাগ সৈন্য নিয়ে আমীর হুসাইন উত্তরের দিকে রওনা হন আর তিমুরকে বিশ্রামের জন্য এখানেই রেখে যান। তিমুরের পায়ের ক্ষত আর কনো ভালো হয়নি। সেই থেকেই তিনি ক্ষুড়িয়ে ক্ষুড়িয়ে হাটতেন এবং ইতিহাসে তিনি তিমুর লং নামে পরিচিত হয়ে যান।  


আমীর হুসাইন উত্তরে এসে জাট মোঙ্গলদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং পরাস্ত হয়। হুসেইনের সৈন্যরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যার যেখানে ইচ্ছা পালিয়ে গেল। হুসাইন কাজটা তিমুরের পরামর্শের বিরুদ্ধে গিয়েই করেছিলেন। এতদিনে তিমুরও আমু নদীর পাড়ে চলে আসলেন। নদীর ধারে তাবু গেঁড়ে হুসাইনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিমুর যখন ফজরের নামাজ পড়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন তখন তিনি নদীর ওপার খেকে একটি তার তাবুর দিকে একদল অশ্বারোহী বাহিনী এগিয়ে আসছে। তিমুর সবাইকে জাগিয়ে দিলেন এবং নিজেই তাদের বাধা দিতে এগিয়ে গেলেন। তিমুর বাহিনীর কাছে পৌঁছে তাদের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেন। বাহিনীর মধ্য থেকে একজন জবাব দিল তারা শাসক তিমুরের খোজে এসেছেন। তিমুর তার পরিচয় গোপন রাখলেন এবং বললেন তিমুর কোথায় আছেন তা তিনি জানেন। তিনি বললেন আমি আপনাকে তার তাবুতে নিয়ে যেতে পারি। সৈন্যরা রাজি হল এবং তাকে পথপ্রদর্শক বানিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তিমুর তাদেরকে নিয়ে এগুচ্ছেন আর অন্ধকারে তাদের চেহারা দেখার চেষ্টা করছেন। তাবুর কাছে এসে তিনি  তাদের চিনতে পারলেন আর তারাও তাকে। বাহিনীটি ছিলো তিমুররের বারলাস গোত্রের তিনজন   সেনাপতির। তারা তিমুরের আনুগত্য মেনে নিল এবং সবুজ শহরে জাট মোঙ্গলদের ধ্বংসলিলা সম্পর্কে তাকে অবহিত করে। এমন খবর শুনে তিমুর খুব ব্যাথিত হলেন। সবুজ শহরকে বাচাতে হলে সবার আগে তিমুরকে মাভেরান্নাহার দখল করতে হবে। তিনি তার অসাধারণ যুদ্ধ কৌশল অবলম্বন করে মোঙ্গল সেনাপতি বিকিযুককে পরাজিত করে যুদ্ধবন্দি করে। পরবর্তীতে তিনি বিকিযুক ও তার সহযোগীদের ক্ষমা করে দেন। এরপর কিছুদিনের মধ্যৈই তিনি সবুজ শহরকে তার দখলে নিয়ে আসেন।


তিমুর যখন মাভেরান্নাহার ও সবুজ শহর দখল করে নিয়েছিলেন তখন মোঙ্গল খান তুঘলক মারা যাওয়ায় খানজাদা ইলিয়াস বাবার সিংহাসন অধিকার করার জন্য সমরখন্দ ছেড়ে রাজধানীতে চলে গিয়েছিলেন। ফলে তিমুর সবুজ শহর আর মাভেরান্নাহারকে নিজের দখলে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাবর সিংহানে অধিষ্ঠিত হয়েই ইলিয়াস তিমুরকে দমনের জন্য বিশাল বাহিনী নিয়ে সবুজ শহরের দিকে রওনা হলেন। তিমুরের একার পক্ষে এত বড় বাহিনীর মোকাবিলা করা সম্ভব ছিল না। তাই তিনি আমীর হুসাইনের আফগান ও পাহাড়ি উপজাতি সৈন্যর অপেক্ষা করছিলেন। হুসাইনের চলে আসার পরই তিমুর তার বাহিনীকে নিজের মতো সাজালেন। তিনি তার বাহিনীকে ডান ও বাম দিক থেকে ভাগ করেন এবং একটি অংশ রিজার্ভে রাখেন। ডান পাশটা তিনি বাম পাশের তুলনায় অধিক শক্তিশালী করেছিলেন এবং আমীর হুসাইনকে এর সেনাপতি নিয়োগ দেন আর তিমুর নিজে অপেক্ষাকৃত দূর্বল বাম প্রান্তের দায়িত্ব নেন। মোঙ্গল ও তাতার উভয় বাহিনী মুখোমুখি দড়ানো। এমন সময় বৃষ্টি শুরু হল সথে যুদ্ধও। উভয় পক্ষেই সৈন্যরা মারা পরছে। ঘোড়ার ক্ষুরের আঘাতে যুদ্ধ ময়দানে হাটু পর্যন্ত কাদা হয়ে গেল তবুও যুদ্ধ চলতে থাকল। যুদ্ধে তিমুর বিজয় দেখতে পাচ্ছিলেন। তিমুর  তখন হুসাইনকে তিমুরের সাথে যোগ দিয়ে ইলিয়াসের ওপর হামলা করতে বলেন। কিন্তু হুসাইন তিমুরের সাথে যোগ না দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে গেলো। ফলে তিমুরকেও পিছিয়ে আসতে হলো। পরদিন তিমুর নিজেই ইলিয়াসের বাহিনীকে মোকাবেলার জন্য এগিয়ে গেলেন এবং পরাস্ত হলেন। মোঙ্গল খান ইলিয়াস যুদ্ধে বিজয়ী হলো। হতাশ তিমুর একহ্রাস লাশের মাঝ দিয়ে ঘোড়ায় চেপে চলতে থাকলেন তাকে অনুসরণ করে তার পিছেনে চলছে বারলাস গোত্রের ছোট্ট একটি অশ্বারোহী বাহিনী। তাকে খুব বাজেভাবে পরাজিত করা হয়েছে আর তাকে সাহায্য না করার জন্য তিনি হুসেইনকে কখনোই ক্ষমা করতে পারবেন না। হুসাইন তাকে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার জন্য। তিমুরের এখন পলানোর ইচ্ছে নেই। তিনি বললেন তিমার রাস্তা ভারত না সাত দোযখ, তাতে আমার কী? তিনি সমরখন্দে ফিরে গেলেন এবং দেখলেন যে ইলিয়াস তিমরকে পরাজিত করে সমরখন্দ অবরোধের পরিকল্পনা করছে। ইলিয়াস এখন তিমুর থেকে সমরখন্দকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাই তিমুর সুযোগের সৎ ব্যাবহার করলেন আর আবার সৈন্য সংগ্রহ করার জন্য নিজের উপত্যকায় ফিরে গেলেন। গিয়ে দেখলেন তার প্রিয়তমা স্ত্রী আলজাই আগা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাকে বাড়ির আঙিনায় দাফন করা হয়েছে।


রাজকন্যা আলজাই আগার মৃত্যুর পর তিমুর আর হুসাইনের মধ্যকার পাঁচ বছরের সম্পর্কের ইতি ঘটে। আলজাই আগার মৃত্যুতে তিমুর অনেক ভেঙে পড়েছিলেন। একজন সূফী যায়েনাদ্দীন এর একটি চিঠি পেয়ে তিমুর আবার পুরনো উদ্যম ফিরে পান। যায়েনাদ্দীন তার চিঠিতে লিখেছিলেন "আমাদের জীবন আল্লাহর দেয়া আর তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট আছে আর মৃত্যুর জন্য একটি সময়"।

তিমুর দবা খেলায় অসাধারণ পারদর্শী। এটি ছিল তার প্রিয় খেলা। একদিন মনোযোগ দিয়ে তিমুর দাবা খেলছিলেন এমন সময় একদল আলেম হন্তদন্ত করে তার কাছে আসল। তারা বলল 'আল্লাহ বিশ্বাসীদের হাতেই অত্যাচারীর মৃত্যু লিখে রেখেছেন '। তারা আরো বলল ' বুখারা ও সমরখন্দ থেকে কিছু শ্রদ্ধাভাজন ও সাহসি আইনবিদ এসেছেন। তারা অত্যাচারী জাট মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে উষ্কানি দিচ্ছেন যেন তারা অন্যায় ও অত্যাচরীর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নেয়, আমাদের শাসক  রাজপুত্র ( হুসাইন) তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আগ পর্যন্ত এমনটাই হাচ্ছিল'। সমরখন্দের বাসিন্দারা তাদের দুই রাজপুত্রকে(তিমুর ও হুসাইন) ছাড়াই নিজেদের শহরকে রক্ষা করে যাচ্ছিল। আল্লাহর রহমতে জাট সেনাদের শিবিরে প্লেগ ছড়িয়ে  পড়ে। মোঙ্গলদের বেশিরভাগ ঘোড়া ও সেন্যই মহামারিতে মারা পরল। ফলে মোঙ্গলরা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। মোল্লাদের চলে যাওয়ার পর তিমুরের অফিসাররা এ খবর নিশ্চত করল। হঠাৎ আসা এক সৌভাগ্য আমীর হুসাইনকে( কাযানের নাতি) নিজ দেশে ফিরিয়ে আনে। হুসাইন বীরের বেশে সমরখন্দ শহরে প্রবেশ করেন। এখন হুসাইন আর তিমুর ভারত থকে আড়াল সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল ভূমির যৌথ অধিপতি। নীতিগতভাবে তিমুর ও  হুসাইন সমান অধীকারি। কিন্তু হুসাইন তার পিতামহ রাজশক্তির স্রষ্টা কাযানের পথে হাটলেন। পর্যাপ্ত শক্তি থাকা সত্তেও তিনি পুতুল খানের নীতি অবলম্বন করলেন অর্থাৎ মোঙ্গল খানকে হাতে পুতুল বানিয়ে নিজে ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করা পাশাপাশি তিমুরকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা। হুসাইন মোঙ্গল খানের ক্ষমতা প্রাসাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে নিজে দেশ পরিকল্পনা করেন। কিন্তু তিমুর তার অধিকার ত্যাগে রাজি ছিলেন না। তিনি হুসাইনকে দৃঢ়তার সাথে বললেন যে সবুজ শহর থেকে আমু দরিয়া পর্যন্ত সমস্ত এলাকা তাকে দিতে হবে। তিমুর তার অধিকার রক্ষা করতে পারলেও পদাধিকার বলে হুসাইন তার উপরে ছিল। পরবর্তীতে তিমুরের শাসিত অঞ্চলসমুহে হুসাইনের স্বেচ্ছাচারীতার ফলে তিমুরের সাথে হুসাইনের মধ্যে বিরোধ এবং বিরোধ থেকে শত্রুতা শুরু হয় শুরু হয়। এই শত্রুতার জেরে তিমুর হুসাইনের এক সেনাপতি মূসার কাছ থেকে কার্শি দূর্গ দখল করে নেন। পরে বাদাখশানও দখল করে নেন। হুসাইনের অনুসারিরা তার কার্যক্রমে বিরক্ত হয়ে তিমুরের বীরত্ব ও নেতৃত্বের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিমুরের বাহিনীতে যোগ দেয়। তিমুর এখন একটি বিশাল বাহিনীর নেতা। সূর্যের আলোতে বরফ যেমন গলে যায়, তিমুরের বাহিনীর কাছে তেমনি হুসাইনের শক্তিও গলে গেল। হুসাইন তিমুরের বাহিনীর তাড়া আমু নদীর দক্ষিণ দিক বরাবর পালিয়ে গেল এবং বলখ শহরে এসে নাস্তানাবুদ হয়ে গেল। হুসাইন তিমুরকে শেষ একটি প্রস্তাব দিল যে সে এই দেশ চিরতরে ত্যাগ করে আজীবনের জন্য মক্কায় চলে যাবেন। কারো কারো মতে তিমুর এই প্রস্তাব মেনে নিয়েছিলেন আবার কেউ কেউ বলেন তাকে হত্যা করা হয়েছিল। আমীর হুসাইনের মৃত্যু সম্পর্কে স্পষ্ট কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তিমুর এখন আড়াল সাগর থেকে ভারত পর্যন্ত বিস্তৃত ভূমির একচ্ছত্র অধিপতি হতে চলেছেন। 


তিমুর এখন বিশাল সম্রাজ্যের আমীর। সমরখন্দের অবস্থান তার সম্রাজ্যের একেবারে মাঝখানে তাই সমরখন্দ হয়ে ওঠলো নতুন সম্রাজ্যের রাজধানী। তিনি রাজধানীতে নতুন নতুন ইমারত ও মসজিদ নির্মাণ করে শহরের শ্রী বৃদ্ধি করেন। আমীর তিমুর খুব বেশিদিন আরামে থাকতে পরেননি। তার সম্রাজ্যের উত্তর দিকে মোঙ্গলদের একটি শাখা স্বর্নালি উপজাতির নেতা তুকতামিশ বিদ্রোহ করে। তুকতামিশকে তিমুর পরাজিত করে বন্দি করেন। তুকতামিশ ক্ষমা চাইলে তিমুর তাকে ক্ষমা করেন এবং তাকে রুশ সীমান্তবর্তী একটি প্রদেশের শাসক নিয়োগ করেন। কিন্তু তুকতামিশ ছিল একটি অকৃতঘ্ন।  নিজের অবস্থা যখন ভালো হলো তুকতামিশ আবার বিদ্রোহ করে। তিমুর  তাকে দমন করতে এলেন কিন্তু তুকতামিশ পালিয়ে গেল। তিমুর ছাড়ার পাত্র নয়, তিনি প্রায় ১০০০ হাজার মাইল পথ পর্যন্ত তুকতামিশের পিছু নিয়ে তাকে শায়েস্তা করেন। এখন তিমুরের সম্রাজ্য পুরোপুরি নিরাপদ। তিমুর এখন বিশ্ব বিজয়ে তার চোখ নিবন্ধ করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিমুর পরো মধ্য এশিয়সহ একে একে মস্কো,বাগদাদ ও দিল্লি সহ বড় বড় শহর জয় করে নিলেন। তার সম্রাজ্যের সীমানা এখন উত্তরে রাশিয়া, দক্ষিণে ভারত, পূর্ব ক্যাথির(চীন) সীমানা এবং পশ্চিমে ওসমানীয় সালতানাতের সীমানা পর্যন্ত বিস্তৃত। 


এবার তিমুর তার জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সম্মুখীন হলেন। ১৪০২ সালে ওসমানিয় সুলতান বাইজীদ ইলদিরিম( the thunderbolt) এর সাথে আঙ্কারায় তিমুরের যুদ্ধ হয়। তিমুর যেমন ছিলেন পূর্ব পৃথিবীর বিজেতা, বাইজীদও ছিলেন পশ্চিম পৃথিবীর বিজেতা। দুজনই মহা বিজেতা খেতাবের জন্য যোগ্য ছিলেন। দুই মহা বিজেতার মধ্যে এই যুদ্ধ বাধার মূল কারণ ছিল বাগাদাদের সুলতান আহমদকে বায়েজিদের আশ্রয় প্রদান। তিমুর যখন বাগদাদে অভিযান পরিচালনা করছিলেন তখন বাগদাদের শাসক সুলতান আহমদ ওসমানীয় সুলতানের কাছে আশ্রয় চাইলে বাইজীদ তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রদান করেন। এতেই সমস্যার শুরু। বাইজীদ যেন সুলতান আহমদকে কোনো ধরনের কোন আশ্রয় বা সহায়তা প্রদান না করেন সে বিষয়ে তিমুর বাইজীদের কাছে পত্র পাঠান। তিমুর ভদ্র ভাষায় চিঠি লিখলেও প্রতিত্তোরে বাইজীদ ততটা ভাষা ব্যাবহার করেননি। বাইজিদ তিমুরকে অপমান করে চিঠির উত্তর পাঠিয়েছিলেন। তিমুরও পাল্টা উত্তর দিল।এবার ভদ্র ভাষায় নয়, বাইজীদকে অপমান করে। তছাড়া ইউরোপীয়রাও তিমুরকে বাইজিদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল। ১৩৯৬ সালে বাইজিদ নিকোপোলিসে সর্বশেষ ও বৃহত্তম ক্রসেডার বাহিনীকে পরাজিত করে কনস্টান্টিনোপল(ইস্তাম্বুল)  শহর অবরোধ করেন। এমন সময় আচমকা তিমুর ওসমানীয়দের সীমান্তবর্তী শহর সীভাস দখল করে নেয়। তাতারদের আক্রমণ ঠেকাতে সুলতান  বায়েজীদ কনস্টান্টিনোপলে অবরোধ বাতিল করে এশিয়া মাইনরে আসতে বাধ্য হন। বাইজীদ আঙ্কারায় অবস্থান নিয়ে তিমুরের জন্য করতে থাকেন। তিমুর তার দক্ষ গোয়েন্দা বাহিনী দ্বারা বাইজীদের অবস্থান জানতে পারেন এবং বাইজীদের গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাইজীদের পেছন দিকে অবস্থান নেন। তিমুর এমন একটি জায়গায় অবস্থান নিলেন যেখান থেকে বাইজীদের বাহিনী পানি সর্বরাহ করতো। তিমুরের এমন অবস্থানের কারণে বাইজীদের বাহিনী পানির অভাবে ভুগতে থাকে। বাইজীদের প্রায় ৫০০০ সৈন্য পানির অভাবে যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই মারা যায়। যারা বেচে ছিল তারাও খাবার আর পানির অভাবে দূর্বল হয়ে পড়ে। অন্যদিকে তিমুরের বাহিনী ছিলো মহা সুখে। তাদের আত্নবিশ্বাস ছিল আকাশচুরি, ঘোড়াগুলো ছিল শক্তিশালী আর রসদেরও কোন অভাব নেই। অবশেষে দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হল, বাইজীদের বাহিনী শারিরীক ভাবে দূর্বল হয়ে পড়ায় তিমুরের বাহিনীর সামনে কচুকাটা হতে থাকে। একামত্র জেনিচারিরাই দূর্বল অবস্থাতেই বীরের মতো যুদ্ধ করছিল। বাইজিদ তখন পালাতে চাইছিলেন কিন্তু বিজ্ঞ তিমুর বাইজিদকে বন্দি করলেন, সাথে সুলতানের ছেলে মুসাকেও বন্দি করা হলো।সুলতান বাইজীদ খুব বাজে ভাবে যুদ্ধে পরাজিত হলেন।


বাইজিদকে হাত বাধা অবস্থায় তিমুরের সামনে উপস্থিত করা হলো। বাইজীদকে বন্দী পেয়ে তিমুর খুব খুশি হলেন। বাইজীদ তিমুরকে বললেন 'এই যুদ্ধে আল্লাহ আপনার সহায় হয়েছে'। তিমুর মৃদু হাসলেন এবং তিমুর তার বাধন খুলে দেয়ার আদেশ দিলেন, বাইজীদের বাঁধন খুলে দেয়া হলো। বাইজিদ তিমুরকে একটি অনুরোধ করলেন যেন তিনি শাহাজাদা মুসার প্রাণ ভিক্ষা দেন। তিমুর তার অনুরোধ রাখলেন এবং মুসাকে মুক্ত করে দিলেন। বন্দি জীবনের লজ্জা, দুঃখ আর নিজের এ পরিণতি সহ্য করতে না পেরে ১৪০৩ সালে ৪৩ বছর বয়সে মারা যান। এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে শেষ হয় ওসমানীয়দের এক গৌরবময় অধ্যায়। তিমুরের আসলে ওসমানীয় সালতানাত দখলের কোন ইচ্ছা ছিল না, যদি থাকত তাহলে তিমুরের পক্ষে এটা করা খুব সহজ ছিল। এর থেকে বুঝা যায় তিমুর ও বাইজীদের মধ্যকার যুদ্ধ ছিল নিতান্তি শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের যুদ্ধ, আর এ যুদ্ধে তিমুরই শ্রেষ্ঠ পমাণিত করলেন।


আঙ্কারার যুদ্ধে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করে নিজ শহর সমরখন্দে ফিরে আসেন। ১৪০৬ সালে চীনে অভিযান পরিচালনা করার সময় এই মহান বিজেতা ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তার মৃত্যুর পর তার মেঝ ছেলে শাহরুখ তিমুরের প্রতিষ্ঠিত বিশাল সম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন।


    মৃত্যুর সময় তিমুরের সম্রাজ্যের মানচিত্র 


নোট: তিমুর লং বা অন্যকোন ইতিহাস নিয়ে আপনার কোন রেকমেন্ডেশন থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন। আপনাদের রেকমেন্ডেশন গুলো নিয়ে অবশ্যই  কাজ করব, ইনশাল্লা।  

সূত্র: দুনিয়া কাপানো তৈমুর লং 

মূল: হ্যারল্ড ল্যাম্ব

অনুবাদ :যায়নাদ্দীন সানি

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ