সম্রাট জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবুর মির্জা
সম্রাট জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবুর মির্জা (১৪৮৩-১৫৩০)
সম্রাট বাবুর, জহির উদ্দীব মুহাম্মদ বাবুর এ নামটি শোনেনি বা এ ব্যাক্তিটি সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণা নেই এমন মানুষ খুজে পাওয়া খবই দুষ্কর অন্তত করে ভারতবর্ষে। সম্রাট বাবুর হলেন ভারতবর্ষের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী, সুগঠিত, জৌলুশভরা ও জাঁকজমকপূর্ণ বিশাল মোঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। মোঘল সম্রাজ্যই ভারতবর্ষের একমাত্র মুসলিম সম্রাজ্য যা পুরো ভারতবর্ষকে শাসন করেছে। মোঘল আমলে ভারতবর্ষের এমন কোন অঞ্চল বাকি ছিল না যা কিনা মুঘল শাসনের বাইরে ছিল। এ সম্রাজ্য এতই বিশাল ছিল যে এর সীমানা ভারতবর্ষ তথা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান ছাড়িয়ে বিস্তৃত হয়েছিল বারমা(মায়ানমার), নেপাল, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায়, পারস্য সম্রাজ্যের সীমানা পর্যন্ত।
মহান সম্রাট বাবুর ১৫২৬ সালে ভারতবর্ষে এ মোঘল সম্রাজ্যের গোড়া পত্তন করেছিলেন।
পৃথিবীর কোন কিছুই সহজে পাওয়া বা অর্জন করা যায় না। মোঘল সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে বাবুরকেও বহু কষ্ট করতে হয়েছে, করতে হয়েছে বহু যুদ্ধ।
বাবুরের পরিচয় :
১৪৮৩ সালে ফারগানার আন্দিজান শহরে জন্ম গ্রহণ করেন বাবুর। জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবুর মির্জা ছিলেন মধ্য এশিয়ার বর্তমান উজবেকিস্তানের ছোট ফারগানা রাজ্যের শাসক মির্জা উমুর শেখের জেষ্ঠ পুত্র। বাবুরের মাতা কুতলুঘ নিগার খানম ছিলেন চেঙ্গিস খানের পঞ্চম বংশধর। পিতার দিক থেকে বাবুর ছিলেন তুর্কি বিজেতা তৈমুর লং এর বংশধর।
বাবুরের সিংহাসন আরোহণ :
১৪৯৪ সালে এক দুর্ঘটানায় বাবুরের পিতা ওমুর শেখ মির্জার মৃত্যু হলে মাত্র বার বছর বয়সে ফারগানার সিংহাসনে আরোহরণ করেন। সিংহাসন লাভকালে বাবুরের বয়স কম হওয়ায় শুরুতেই তিনি অনেকগুলো বিদ্রোহের সম্মুখীন হন কিন্তু বিদ্রোহগুলো খুব একটা জড়ালো না হওয়ায় বাবুর তা দমনে সক্ষম হন। বয়স কম হলেও বাবুর ছিলেন উচ্চাভিলাষী। তিনি তার পূর্ব পুরুষ সম্রাট তিমুরের রাজধানী ও সিংহাসন অধিকার করার ইচ্ছা মনে মনে লালন করতেন।
বাবুরের সমরকন্দ অভিযান ও ভবঘুরে জীবন :
সমরকন্দ শহরটি বাবুরের জন্য একটু কাঙ্খত শহর ছিল। বাবুর যেকোনো মূল্যে এ বিখ্যাত শহরটি জয় করতে চাইতেন। এমন ইচ্ছা থেকেই ১৪৯৭ সালে বাবুর সকরকন্দে অভিযান পরিচালনা করেন। এটি ছিল বাবুরের প্রথম যুদ্ধ যাত্রা। এ যুদ্ধে বাবুর বিজয়ী হন এবং কাঙ্খিত শহরটি জয় করেন। কিন্তু সমরকন্দ জয় করতে না করেতেই তিনি খবর পেলেন রাজধানি আখসিতে তার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে কতিপয় আমীর ওমরা বিদ্রোহ করেছে এবং ছোট ভাই জাহাঙ্গীর মির্জাকে ফারগানর সিংহাসনে বসিয়েছে। এই খবর পেয়ে বাবুরকে সমরকন্দকে অরক্ষিত রেখেই রাজধানি আখসির উদ্দেশ্য রওয়ানা হলেন এবং নিজের সিংহাসন রক্ষা করলেন। নিজের সিংহাসন তো নিরাপদ করলেন কিন্ত সেই কাঙ্খিত শহর সমরকন্দ হাতছাড়া হয়ে গেলো। এরপর প্রায় চার বছর কেটে গেল, বাবুর এখন আঠারো বছরের যুবক। ১৫০৩ সালে বাবুর আবার সমরকন্দ আক্রমণ করলেন এবং মাত্র ২৪০ জন সৈন্য নিয়ে তিনি গেরিলা পদ্ধতিতে সমরকন্দ পূণরায় দখল করেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য তার পিছু ছাড়ছে না, এক বছর না পেরোতেই ১৪০৩ সালে উজবেক সম্রাট শাইবানি খান সমরকন্দ অবরোধ করেন। শায়বানি খান ছিলেন এক বিশাল সম্রাজ্যের সুলতান। তার ছিল একটি সুগঠিত উজবেক বাহিনী। শায়বানি খানকে মোকাবিলা করা বাবুরের ছিল না। সমরকন্দ আবার বাবুরের হাতছড়া হলো। এবার বাবুর শুধু সমরকন্দই হারাননি, নিজের একান্ত বিশ্বস্ত আমীর আহমদ তাম্বুলের বিশ্বাস ঘাতকতায় হারিয়েছেন আপন রাজ্য ফারগানাও, হারিয়েছেন প্রিয় বড়বোন খানজাদা বেগমকে(শায়বানি খান বন্দি করেছিলেন এবং পরে বিয়ে করেছিলেন)। বাবুর এখন রাজ্যহীন এক ভবঘুরে রাজা। প্রায় এক বছর বাবুর ও তার পরিবার একটি ছোট ধ্বংসপ্রায় গ্রামে অতিবাহিত করলেন। বলা হয় বাবুর এ সময় কৃষি করতেও বাধ্য হয়েছিলেন। তবে বাবুরের দুঃসময় বেশিদিন স্থায়ি হয়নি। পবিত্র কোরআনে একটি কথা আছে "দুঃসময়ের পরেই সুসময় আসে”। বাবুরের ক্ষেত্রেও এমনটাই হলো। তার এই ভবঘুরে সময়ের ইতি ঘটলো ১৫০৪ সালে আফগানিস্তানের কাবুল জয়ের মাধ্যমে। তিনি ঠিক কিভাবে কাবুল জয় করেছিলেন তা কোন সুস্পষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায়নি। কাবুল জয়ের মাধ্যমে বাবুরের ভাগ্যের চাকা সচল হয়। তিনি নিজেকে শক্তিশালী করতে থাকেন। এবং ১৫১১-১৫১২ সালের দিকে তিনি তৃতীয়বারের মতো সমরকন্দ আক্রমণ করেন। এসময় তিনি একা ছিলেন না। তার সাথে ছিলো কয়েক হাজার শিয়া সাফাবিদ(পারস্য সম্রাজ্য) সৈন্য। এ যুদ্ধে বাবুর শায়বানি খানকে পরাজিত ও হত্যা করে সমরকন্দ পুনর্দখল করেন।
শাহ ইসমাইলের সাথে বাবুরের বিরোধ :
সমরকন্দ দখল করার পর পরই বাবুরের সাথে পারস্যের শাহ ইসমাইলের বিরোধ শুরু হয়। সমরকন্দ অভিযান পরিচালনার আগে বাবুর পারস্যের শাহের সাথে একটি চুক্তি করেছিলেন। চুক্তিটির মূল ধারা ছিল ১. সমরকন্দ অভিযানে শাহ ইসমাইল বাবুরকে সামরিক সাহায্য করবেন বিনিময়ে বাবুরকে শিয়া মত গ্রহণ করতে হবে এবং ২. সমরকন্দের মসজিদগুলোতে জুমাআর খুতবায় ওসমানীয় খলিফাদের নাম বাদ দিয়ে শাহ ইসমাইল ও বার ইমামের নাম পাঠ করতে হবে। কিন্তু সমরকন্দ জয় করার পর বাবুর প্রথমদিকে মসজিদগুলোতে শিয়াদের শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে চয়েছিলেন কিন্তু শহরের জনগণ সুন্নী হওয়ায় সমরকন্দ বাসি বাবুরের এমন সিদ্ধান্তের চরম বিরোধিতা করে। প্রকৃত পক্ষে বাবুর নিজেও চাইতেন না এমনটা হোক। তাই তিনি শহরবাসিকে তেমন কোনো চাপ প্রয়োগ করলেন না। বাবুরের এরুপ উদাসীন আচরণে পারস্য শাহ ক্রোধান্বিত হয়ে তার সৈন্যদের সমরকন্দের সকল মূল্যবান বস্তু লুট করে পারস্যে ফিরে যেতে আদেশ করেন। পারস্য সৈন্যরা তেমনটাই করলো। বাবর আবার একা হয়ে পড়লো। সমরকন্দ বিজয়ের মাত্র আট মাস পর শায়বানি খানের পুত্র মুহাম্মদ তিমুর সুলতান বাবুরকে পরাজিত করলে সমরকন্দ তৃতীয় ও শেষবারের মতো বাবুরের হাতছাড়া হয়। এই পরাজয়ের পর বাবুর আর কখনো সমরকন্দের ফিরে তাকাননি।
বাবুরের হিন্দুস্তান(ভারত) জয় :
সমরকন্দ থেকে ব্যার্থ হয়ে ফিরে আসার পর বাবুর প্রায় আট বছর কোন যুদ্ধ করেননি। ১৫১২ থেকে ১৫১৯ সাল পর্যন্ত বাবুর সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজান। সৈন্যদেরকে আধুনিক কমানসহ নানা ধরনের আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত করেন। সেনাবাহিনীকে যথেষ্ট শক্তিশালী করে বাবুর তার রাজ্যকে একটি সম্রাজ্যে পরিণত করার প্রয়াস শুরু করেন। ১৫২০ সালে বাদাখ্শান ও ১৫২২ সালে কান্দাহার বিজয়ের মাধ্যমে বাবুরের রাজ্য বিস্তার নীতির বাস্তবায়ন শুরু হয়।
বাবুরের লাহোর অধিকার :
বাদখ্শান ও কান্দাহার জয় করে বাবুর ভারতে অভিযান চালানোর সুযোগ খুজছিলেন। কিছুদিন পর ভারতের রাজনীতিতে প্রবেশের এমন একটি সুযোগ বাবুর পেলেন। ভারতের তৎকালীন বাদশা সুলতান ইব্রাহিম লোদীর দুজন আমীর( পাঞ্জাবের গভর্নর) দৌলত খান ও আলম খান সম্রাট বাবুরকে পাঞ্জাব আক্রমণের জন্য অনুরোধ করে। বাবুর এমন একটি সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। তিনি ১৫২৪ সালে একটি অভিযান পরিচালনা করে পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোর দখল করেন। এই অভিযানে বাবুরকে সাহয্য করেছে দৌলত খান ও আলম খান। দৌলত খান ও আলম খান মূলত বাবুরকে ব্যাবহার করে পাঞ্জাবে নিজেদের সার্বভৌম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিধির বাম ঘটল। বাবুর পাঞ্জাব দখল করে নিজের শাসন কায়েম করতে থাকেন। এতে ক্ষুদ্ধ হয় দৌলত খান ও আলম খান। তারা বাুবুরের বিরোধিতা করতে থাকে। অভিযানের সময় বাবুর তার মূল সৈন্য বাহীনিকে কাবুলেই রেখে এসেছিলেন। ফলে দৌলত ও আলম খানের বিরাধিতার জবাব না দিয়ে তিনি কাবুলে ফিরে গেলেন।
পানিপথের যুদ্ধ :
১৫২৪ সালে লাহোর থেকে ফিরে গিয়ে বাবুর তার পূর্ণ শক্তি নিয়ে ফের ভারতের উদ্দেশ্য রওয়ানা হন। তিনি খুব সহজেই লাহোর পুনর্দখল করলেন। লাহোর জয় করে বাবুর দিল্লির দিকে অগ্রসর হন কিন্তু ভারতের বাদশা সুলতান ইব্রাহীম লোদী বাবুরকে মোকাবিলা করতে লাহোরের দিকে রওয়ানা হলেন। ১৫২৬ সালে এ দুই বাহিনী একে অপরের মুখোমুখি হয়। বাবুরের বাহিনীতে বার হাজার ঘোর সাওয়র ও কামান দগানোর জন্য প্রায় ১২শ সৈন্যের গোলন্দাজ বাহিনী ছিল। অপরদিকে সুলতান ইব্রাহীম লোদীর ছিল এক লক্ষের অধিক সৈন্য। এর মধ্যে ছিল ঘোর সাওয়ার, পদাতিক সৈন্য ও হস্তি বাহিনী। বাবুরের সৈন্য সংখ্যা কম হলেও তারা আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত।
প্রথমে ভারতীয়রা আক্রমণ করলো বাবুর তাদের মোকাবেলার জন্য গোলন্দাজ বাহিনীকে কামান দাগানোর আদেশ দিলেন, সাথে সাথে গর্জে ওঠলো একশো বিশটি কামান। ভারতীয় বাহিনী এই প্রথম কামানের সম্মুখীন হল। পানিপথের যুদ্ধেই ভারতীয়রা প্রথম কামান দেখে। কামানের বিকট শব্দে সুলতান ইব্রাহীম লোদীর হস্তি বাহিনীর হাতিগুলো ভয় পেয়ে এদিক ওদিক ছোটাছুটি শুরু করল। মাহুতেরা কোন ভাবেই হাতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। এমন অবস্থায় বাবুর তার অশ্বারোহী বাহিনীকে আক্রমণের আদেশ দিলেন। যুদ্ধে মারাত্মক বেকায়দায় পড়ে গেলেন সুলতান ইব্রাহিম লোদী। একদিকে তার নিজের হস্তি বাহিনীর হাতিগুলোর পায়ের নিচেই তার সৈন্যরা পিষ্ট হচ্ছে অপরদিকে বাবুরের আক্রমণ। ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো ভারতের বিশাল সৈন্য বাহিনী। একমাত্র রাজপুতরাই শরীরের শেষ শক্তিটুকু দিয়ে যুদ্ধ করছিল। এ যুদ্ধে বাবুর বিজয়ী হলেন এবং সুলতাম ইব্রাহিম লোদীর মৃত্যু হলো তার নিজ হস্তিবাহনের নিচে চাপা পড়ে মারা গেলেন। বাবুরকে ভারতের একচ্ছত্র অধিপতি হতে আর মাত্র একজন ভারতীয় শাসককে পরাজিত করতে হবে আর তিনি হলেন ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী হিন্দু রাজ্য কনৌজের মহারাজা রানা সাঙ্গা।
খানুয়ার যুদ্ধ :
পানিপথের যুদ্ধের এক ছর পর খানুয়ার যুদ্ধ সংঘটিত হয়। পানিপথের যুদ্ধে ইব্রাহীম লোদীকে পরাজিত করে বাবুর উত্তর বারত জয় করেন। এই বিজয়ের পর বাবুর মেবারের রাজপুত রাজা রাণা সাঙ্গার মুখোমুখি হন। রানা সাঙ্গা সমগ্র ভারতজুড়ে একটি রাজপুত রাষ্ট্র গঠনের চেষ্টা করছিলেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি বাবুরকে ভারত আক্রমণে উৎসাহিত করে দূত মারফত বার্তা পাঠিছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন বাবুর ভারতে আক্রমণ করে লোদী বংশের পতন ঘটিয়ে কিছুদিন লুটপাট করে ফিরে যাবে। কিন্তু তার ধারনা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণিত হয়। পানিপথের যুদ্ধে জয়লাভ করে বাবুর এমন অপরুপ সৌন্দর্যের ভূমি ভারতে রাজ্য প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করলেন। আর এতেই রাণা সাঙ্গা ও বাবুরের বিরোধ শুরু হয়। রাণা সাঙ্গা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। প্রায় এক বছরের মধ্যে তিনি আশি হাজার অশ্বারোহী ও পাঁচশত হাতির সমন্বয়ে একটি বিশাল বাহিনী গঠন করতে সক্ষম হন। রাণা সাঙ্গাকে দমন করা বাবুরের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি হয়ে যায়। তাই বাবুর তার অপেক্ষাকৃত ছোট ও কিন্তু দক্ষ সৈন্য বাহিনী নিয়ে মেবারের উদ্দেশ্য রওয়ানা হলেন। অবশেষে ১৫২৭ সালের ১৬ই মার্চে খানুয়ার প্রান্তরে মুখোমুখি হলেন দুই পরাক্রমশালী যোদ্ধা সম্রাট বাবুর ও মহারাজা রাণা সাঙ্গা।
যুদ্ধে বাবুরের কামান ও দক্ষ অশ্বারোহী বাহিনীর অপ্রতিরোধ্য ও দ্রুতগতির আক্রমণে রানা সাঙ্গার বাহিনী হাজারে হাজারে মারা পড়তে থাকে। যুদ্ধে রাণা সাঙ্গার শোচনীয় পরাজয় হলো। তিনি কনোমতে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাতে সক্ষম হন কিন্তু কয়েক বছর পরে এই মনকষ্ট থেকেই মৃত্যুমুখে পতিত হন।
গোগরার যুদ্ধ :
খানুয়ার যুদ্ধে বাবুরের ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে আফগানরা ইব্রাহীম লোদীর ভ্রাতা মাহমুদ শাহ ও বাংলার শাসক নূসরাৎ শাহ একটি মিত্র বাহিনী গঠনকরেন। উল্লেখ্য যে বাবুর দিল্লি দখল করে ইব্রাহিম লোদীর সকল সদস্যদের ক্ষমা করে দিয়ে তাদের সার্বিক নিরাপত্তার ব্যাবস্থাসহ নানা সরকারি উচ্চপদে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
রাজপুত শক্তিকে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত করে সম্রাট বাবুর আফগান ও বংলার মিত্র বাহিনীকে দমন করার জন্য বদ্ধ পরিকর হলেন। ১৫২৯ সালে তিনি বিহারে গোগরা নদীর তীরে সম্মিলিত বাহিনীকে পর্যদুস্ত করেন এবং বাংলার বিহার অঞ্চল দখল করে নেন। সম্মিলিত বাহিনী পরাজিত হয়ে বাংলার শাসক নূসরৎ শাহ বাবুরের সাথে শেষ পর্যন্ত সন্ধি করতে বাধ্য হন।
বাবুরে মৃত্যু :
সম্রাট বাবুর তাঁর বিজয়ের স্বাদ বেশিদিন ভোগ করতে পারেননি। ১৫৩০ সালের ২৬শে ডিসেম্বর মহান সম্রাট বাবুর মৃত্যু বরণ করেন।
তাঁর মৃত্যুর কারণ হিসেবে অনেকেই ইব্রাহিম লোদীর মাতাকে সন্দেহ করেন, তিনি সন্তান হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করে বাবুরের খাবারে বিষ প্রয়োগ করেছিলেন। এ বিষ প্রয়োগের পর থেকে সম্রাট বাবুর আর কোনোদিন সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হতে পরেনি। বিষ প্রয়োগের চার বছর পর নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে সম্রাটের জীবনাবসান ঘটে।
একজন শাসক হিসেবে সম্রাট বাবুর তাঁর জীবন শুরু করেছিলেন ছোট্ট রাজ্য ফারগানার শাসক হিসেবে কিন্তু মৃত্যুর তিনি নিজেকে ভারতের সম্রাট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছেন। মৃত্যুর সময় বাবুর তার বড় ছেলে নাছির উদ্দীন মুহাম্মদ হুমায়ুন মির্জাকে তার উত্তরসুরী ঘোষণা করে যান।
সূত্র :
১. ভারতবর্ষ ও বাঙালির স্বশাসন ২য় খন্ড, শেখ হাফিজুর রহমান(বাংলা একাডেমি)
২. বাবুরনামা, প্রিন্সিপাল ইব্রাহিম খাঁ( বাংলা একাডেমি)
৩. ভারতে মুসলিম রাজত্যের ইতিহস, এ কে এম আব্দুল আলীম
৪. A short history of Muslim rule in India, Ishwariprasad
0 মন্তব্যসমূহ